শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ক্ষমা চাইলেন জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতাদের বিচার করতে চাওয়া আ’লীগ নেতা বিএনপির ‘কথার টোন’ আ.লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে: নাহিদ হাসপাতাল থেকে মাকে বাসায় নিলেন তারেক রহমান ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে বড় চুক্তি বাংলাদেশের ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার দিনক্ষণ জানাল জাতিসংঘ মনিরামপুরের সমাজসেবক জামাল হোসেনের ইন্তিকাল মনিরামপুরে ৫১ কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা চৌগাছায় বাওড় দখল নিয়ে বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষ আহত ১০, মোটরসাইকেল ও পিস্তল-গুলি উদ্ধার কোকোর ১০তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আশুলিয়ায় দোয়া ও মিলাদ নওগাঁর পত্নীতলায় যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

কুরআনের বর্ণনায় আলোকিত পরিবার

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪
  • ৪৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : পবিত্র কুরআনের সুরা ফুরকানে আল্লাহতায়ালা নিজের প্রিয় বান্দাদের কিছু পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। সেখানে বর্ণিত তাদের অন্যতম পরিচয়—তারা মহান প্রতিপালকের কাছে এ বলে দোয়া করে-

হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন জীবনসঙ্গী ও সন্তানসন্ততি দান করুন, যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে ‘ইমাম’ বানিয়ে দিন। -সুরা ফুরকান (২৫): ৭৪

স্ত্রী আর সন্তানসন্ততি- এ নিয়েই তো পরিবার। আল্লাহ তাআলার বিশেষ বান্দা যারা, তারা নিজেদের পরিবারের জন্য এভাবেই চোখের পানি ফেলে দোয়া করে—আল্লাহ যেন তাদের পরিবারকে নেককার বানিয়ে দেন, চোখের শীতলতা বানিয়ে দেন, মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দেন। 

সন্দেহ নেই, দোয়ার অর্থ ও মর্ম অনেক ব্যাপক। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার যে বন্ধন ও ভালোবাসা, তা আল্লাহ তায়ালার এক অসামান্য সৃষ্টি। কোনো প্রকার পূর্ব পরিচয় ছাড়াই, সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি ছেলে ও মেয়ে যখন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অন্যকে জীবনসঙ্গী রূপে বরণ করে নেয়, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে সহসাই সৃষ্টি করে দেন এক আকর্ষণ ও ভালবাসা। আল্লাহ যদি নিজ কুদরতে এ আকর্ষণ সৃষ্টি করে না দিতেন, তবে একসঙ্গে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়ত। 

পবিত্র কুরআনের বর্ণনা—তার অন্যতম নিদর্শন—তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। -সুরা রূম (৩০): ২১

দিনে দিনে এ ভালোবাসা গভীর হয়। সম্পূর্ণ স্বাধীন দুটি মানুষ একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে ধীরে ধীরে একটি যৌথ সত্তায় পরিণত হয়। 

এ ঘনিষ্ঠতা কতটা গভীর—পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামীন এর একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এভাবে—তারা তোমাদের পোশাক আর তোমরা তাদের পোশাক। -সুরা বাকারা (২) : ১৮৭

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে প্রথম মানব ও প্রথম নবী সায়্যিদুনা হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও তার জীবনসঙ্গিনী হজরত হাওয়া রা.-এর সৃষ্টির আলোচনা করেছেন এভাবে—

তিনি তো সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে এক প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়। -সুরা আ‘রাফ (৭): ১৮৯

রহস্য আল্লাহ তায়ালা নিজেই উন্মোচন করে দিচ্ছেন এ বলে—স্ত্রীকে সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন স্বামী তার কাছে গিয়ে শান্তি পায়। রহস্যের এ বর্ণনা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার হৃদ্যতা ও ভালোবাসাকে আল্লাহ তায়ালার অন্যতম নিদর্শন বলে উল্লেখ করা এবং নেককার মুমিনদের প্রার্থনা—চোখজুড়ানো জীবনসঙ্গী আমাদের দান করো—সবই এক সূত্রে গাঁথা।

জীবন চলার পথে এ সঙ্গী—স্বামী ও স্ত্রী যে এ কত বড় নিআমত, তা আমরা কিছুটা অনুমান করতে পারি পবিত্র কুরআনে বর্ণিত জান্নাতের নিআমতরাজির বিবরণ থেকেও। জান্নাতের নিআমত সম্পর্কে চূড়ান্ত কথা তো সেটাই, যা হাদীসে কুদসীতে এভাবে বর্ণিত হয়েছে—

আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন কিছু প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান যার কথা শোনেনি আর কোনো মানুষের হৃদয়ে যা কখনো কল্পনায়ও আসেনি। -সহিহ বুখারি, হাদিস ৩২৪৪

বেহেশতের অফুরন্ত নিআমতরাজির মধ্যেও এক বিশেষ নিআমত- পুতঃপবিত্র স্ত্রী। সহজেই অনুমেয়, দুনিয়াতে এ নিআমত কত বড়!

একজন নেককার পুরুষের জন্য নেককার স্ত্রীর মতোই অসামান্য এক নিআমত—নেককার সন্তান। নিজের ঔরসজাত কিংবা গর্ভজাত বলে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা মানুষ পোষণ করে, বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। সন্তান ছাড়া সংসারে পূর্ণতা আসে না। শুধু সাংসারিক পূর্ণতাই নয়, নিজের জীবনও যেন অপূর্ণ থেকে যায়। অপূর্ণতার এ অনুভবে নারী-পুরুষে কোনো ফারাক নেই। নিঃসন্তান দম্পতি যারা, তারা আন্দায করতে পারবে— নিআমত হিসেবে সন্তান যে কতটা অসামান্য! 

শুরুতে সূরা ফুরকানে বর্ণিত আল্লাহ তাআলার খাস বান্দাদের যে দুআর কথা বলা হয়েছে, সেখানে এমন নেককার সন্তান আর নেককার জীবনসঙ্গীই প্রার্থনা করা হয়। সন্তান ও জীবনসঙ্গী যদি নেককার না হয়, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত না হয়, তাহলে সুখের শত উপকরণে ডুবে থেকেও জীবন হয়ে পড়ে বিভীষিকাময়। কুরআনের ভাষায় যাকে বলা হয়েছে, ‘ফিতনা’। 

সুরা তাগাবুনের আয়াত—নিশ্চয়ই তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের সন্তানসন্ততি ফিতনাস্বরূপ। -সুরা তাগাবুন (৬৪) : ১৫

ফিতনা মানে পরীক্ষা। সন্তান যদি নেককার হয়, তবে তো তা এক মহা নিআমত। তা এমন এক নিআমত, যার ফল মানুষ দুনিয়াতেও ভোগ করে, ভোগ করে মৃত্যু-পরবর্তী কবরের জীবনেও। মৃত মা-বাবার জন্য জীবিত সন্তানের যে আকুতিভরা দোয়া—তা কি দুনিয়ার কোনো ভাষায় সংজ্ঞায়িত করা যায়! 

কিন্তু যদি -আল্লাহ না করুন- সে এমন না হয়, দুশ্চরিত্রের অধিকারী হয়, তবে যে সে সন্তান কেবল নিজের জীবন বরবাদ করবে, কিংবা বাবা-মা তার দোয়া থেকে বঞ্চিত হবে— এমন নয়; বরং এ সন্তানের কারণে বাবা-মায়ের দ্বীনদারীও আক্রান্ত হতে পারে। তখন পরকাল বরবাদ হবে সকলের—সন্তানের এবং বাবা ও মায়ের; এমনকি দুনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনও জাহান্নাম হয়ে পড়তে পারে। 

মন্দ সন্তান বাবা-মাকেও মন্দ কাজে বাধ্য করতে পারে। অন্যায় মন্দ আবদার দিয়ে বাবা-মাকে তাদের অনুসৃত সরল পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে। সন্তানের কাছে বাবা-মা এতটাই অসহায় হয়ে পড়েন, সারা জীবনের মেনে চলা রীতি-নীতিও তারা বিসর্জন দিতে বাধ্য হন ওই দুশ্চরিত্র সন্তানের কারণে। 

সন্তান যখন এমন হয়, তখনই সে ফিতনা বা পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে বুকের সন্তানের আবদার কিংবা দাবি, আরেকদিকে আল্লাহ তাআলার বিধান। এমন পরিস্থিতিতে যারা আক্রান্ত, তারাই এর জটিলতা অনুধাবন করতে পারবেন।

মোটকথা, পরিবার আমাদের জীবনে এক স্বাভাবিক বাস্তবতা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আপদে-বিপদে পরিবারের কাছেই আমরা আশ্রয় খুঁজে পাই। শত কষ্টের উপশম খুঁজে পাই। পরিবারের সদস্যরা—জীবনসঙ্গী কিংবা সঙ্গিনী এবং সন্তানাদি যদি দ্বীনদার হয়, নেককার হয়, তাহলে  সে পরিবার আলোকিত পরিবার। 

দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী আবাসস্থলটাও এক টুকরা বেহেশত মনে হতে পারে। পার্থিব কোনো কষ্টই সেখানে মুখ্য নয়। কিন্তু যদি উল্টো হয়, তাহলে এর ফলও বিপরীতই হবে। এটাই স্বাভাবিকতা। পবিত্র কুরআনে তাই আমাদের এ চিরন্তন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—আমরা যেন নিজেরাও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করি, আমাদের পরিবার-পরিজনকেও যেন বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। 

পড়ুন—হে ঈমানদারেরা! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত থাকবে কঠোরহৃদয় ফেরেশতারা, তারা আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করে না এবং তিনি তাদের যা আদেশ করেন, তারা তা-ই করে। -সুরা তাহরীম (৬৬) : ৬

আলোকিত পরিবার গড়ার জন্য এর বিকল্প নেই।

কিউএনবি/অনিমা/০৯ জুলাই ২০২৪,/বিকাল ৩:৩২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

January 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit