শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন

লুৎফর রহমান এর কলামঃ শচীন কর্তার সন্ধানে —-

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪
  • ১৯৯ Time View

শচীন কর্তার সন্ধানে —-
————————-
একদা রাজতন্ত্র ছিল এ দেশে। সেই রাজতন্ত্রে ত্রিপুরা রাজ্যে ১ অক্টোবর, ১৯০৬ কুমিল্লার ত্রিপুরা রাজ্যের রাজবাড়িতে জন্মগ্রহণ করলেন এক শিশু। বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজ পরিবারের রাজা নবদ্বীপ চন্দ্র দেব বর্মনের এই শিশু সন্তান ছিলেন ৯ জন সন্তানের একজন। শিশুটির মা মণিপুর রাজবংশের মেয়ে নিরুপমা দেব।

ত্রিপুরার আগরতলায় কুমার বোর্ডিং স্কুলে শিশুটির প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়। ত্রিপুরার রাজপরিবারের সন্তানদের এবং তথাকথিত ধনী ঘরের সন্তানদের পড়াশোনার জন্যেই এই স্কুলটি বিশেষভাবে তৈরি হয়েছিল। পরে শিশুর বাবা নবদ্বীপচন্দ্র তাঁকে কুমিল্লার ইউসুফ স্কুলে ভর্তি করে দেন। কুমিল্লা জেলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন শিশু থেকে কিশোর বনে যাওয়া সেই ছেলেটি ।

 

শচীন দেববর্মন মেমোরিয়াল গভঃ মিউজিক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা ড. মনিকা দাশ।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন তারুণ্যের উদ্দীপনায় ভরপুর এক তরুণ। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ঐ কলেজ থেকে আইএ পাস করেন কিশোরীত্তোর্ন সে তরুণ । কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ তে ভর্তি হন শিশু থেকে কিশোর, কিশোর থেকে তরুণ এবং তরুণ থেকে পরিণত সেই যুবক।

এ যুবক কোন সাধারণ যুবক নয়। এ যুবক ত্রিপুরা রাজ্যের এক যুবরাজ। এই যুবরাজের সমস্ত হৃদয় জুড়ে বাস করত কুমিল্লার সাদামাটা এক তরুণী। যে তরুণীর দুর্নিবার এক ভালোবাসার কারণে যুবরাজ ত্রিপুরা রাজ্য হারিয়েছিল। তবুও মীরাদেবের নিখাদ ভালোবাসাকে উপেক্ষা করেননি যুবরাজ।

ত্রিপুরা রাজ্য হারিয়ে যুবক কিভাবে সমগ্র ভারতবর্ষের সংগীতের রাজ্যে মহারাজার আসন অলংকৃত করলেন তা যেন বিস্ময়কর এক কাহিনী।

 

শচীন দেববর্মন মেমোরিয়াল গভঃ মিউজিক কলেজ প্রাঙ্গনে লেখক লুৎফর রহমান।

ব্যক্তিগত ভাবে আমার ভালোলাগার গানের জগতে এই মহারাজ আছেন চীর জাগরুক। কোথায় গেলে পাব তারে – এই অন্বেষণে আমি এসেছি গতকাল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায়। কিন্তু যিনি আছেন অন্তরে তার দেখা মিলবে কোন কাননে?

আমি বলছি শচীন কর্তার কথা। এই উপমহাদেশে শচীন দেববর্মন শুধু উননাসিক কণ্ঠে জনপ্রিয় গান উপহারই দিয়ে যাননি, তিনি অন্তর দিয়ে গেয়েছেন প্রিয়তমা স্ত্রী মীরা দেবর্মনের লেখা অসংখ্য মন মাতানো গান। সংগীতের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় যিনি দাপুটে শাসন করে গেছেন ধীর্ঘদিন।

আজ গিয়েছিলাম আগরতলার ”শচীন দেববর্মন মেমোরিয়াল গভঃ মিউজিক কলেজ এ। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা ড. মনিকা দাশের আমন্ত্রণে ছিল প্রাণের ছোঁয়া। অত্যন্ত্য জ্ঞানী, মেধাবী এবং চৌকষ একজন মানুষ মনিকা দাস। চা পর্বের মাঝে শোনালেন এই মিউজিক কলেজের বর্ণাঢ্য ইতিহাস। বাংলা ও রবীন্দ্র সংগীতের উপর ডাবল এম এ করেছেন তিনি। ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করে ড.মনিকা দাস এখন ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাসে সংগীত দীক্ষার দিকপালে পরিণত হয়েছেন।

 

শচীন দেববর্মন মেমোরিয়াল গভঃ মিউজিক কলেজ এবং গভঃ অব আর্টস এন্ড ক্রাফট কলেজ আগরতলা এর প্রবেশদ্বারে লেখক।

শচীন দেববর্মন মেমোরিয়াল গভঃ মিউজিক কলেজ এর পাশের আরেক সুরম্য প্রতিষ্ঠান ”আগরতলা গভঃ অব আর্টস এন্ড ক্রাফট কলেজ। পাশাপাশি যেন দুই যমজের সহাবস্থান। মুগ্ধ নয়নে দেখলাম সব মহাকীর্তি আর মুঠো ফোনে বন্দি করেছি আজকের যত দৃশ্যাবলী।

– লুৎফর রহমান।

আগরতলা। ত্রিপুরা। ভারত।

৩১.০৫.২০২৪/ রাত ১১.১৫

 

লেখকঃ লুৎফর রহমান একজন রাজনীতিবিদ ও লেখক। তিনি নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক নিউজ মিডিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র লুৎফর রহমান ৮০ এর দশকের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরতে চারটি রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছেন, যা দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে তিনি এখন ব্যাপক পরিচিত পাঠক মহলে। গঠনমূলক ও ইতিবাচক লেখনীতে তিনি এক নতুন মাত্রা সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছেন।

 

 

কিউএনবি/বিপুল/০৮০৬.২০২৪/ সকাল ১১.১৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

January 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit