ডেস্ক নিউজ : পূর্বাচলে এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো আয়োজিত হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এতদিনে নতুন জায়গায় থিতু হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বরাবরের মতো এবারও স্থান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিক্রেতাদের একাংশের। স্থানের পাশাপাশি এবার মেলার সময়সূচি নিয়ে শুরু থেকে কম জল ঘোলা হয়নি। সাধারণত ১ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্য মেলা শুরু হলেও, নির্বাচনের কারণে এবার মেলা কিছুটা পিছিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ১৫ জানুয়ারি মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মেলা উদ্বোধন হয় ২১ জানুয়ারিতে। সময় নিয়ে নিশ্চিত না থাকায় এবং নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি কেমন হবে, এ নিয়ে সংশয় থাকায় মেলার শুরুতে প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল বলে জানান বিক্রেতারা। মূলত মেলার স্থান, সময়সূচি, শীতের শেষ এবং রমজান সন্নিকটে থাকায় মেলায় বিক্রি কমছে বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। এমন অভিযোগ জানিয়ে মেলায় স্যুট ব্যবসায়ী আহমেদ বলেন, ‘স্টল নিয়ে ও কর্মী রেখে আমাদের এক মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও ৫ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়নি।’
মেলায় দর্শনার্থী আসলেও বিক্রি কম জানিয়ে আহমেদ বলেন, শীত প্রায় শেষ বলে এখন আর কেউ শীতের পোশাক কিনছেন না। স্যুট, শাল ও কোটির দোকানদাররা এক রকমের অলস সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে রমজান ঘনিয়ে আসায় অনেকে ঈদের কালেকশনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এতে এবারের মেলায় বিক্রেতারা না শীতের ক্রেতা ধরতে পেরেছেন, না ঈদের। ফলাফল বেচাকেনা খারাপ হয়েছে।
ঈদের প্রসঙ্গ টেনে ফরিদ নামে আরেক শাল বিক্রেতা বলেন, মানুষ এখন হাতে টাকা ধরে রাখতে চাইছে। রোজা-ঈদ মিলিয়ে সামনে বড় খরচ আছে। এজন্য মেলায় শৌখিন জিনিস কিনে টাকা ঢালতে চাচ্ছেন না তারা।
তবে মেলার বেচাবিক্রি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক-১ মাহবুবুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, লাখ লাখ দর্শনার্থী মেলায় আসছেন। যদি দর্শনার্থী সংখ্যা কম হতো, তাহলে না হয় দায় নেয়া যেত। কিন্তু মেলায় দর্শনার্থী আসার পরেও যদি বিক্রি কম হয় সেখানে ইপিবির কী করার আছে।অনেক বিক্রেতা বলছেন, মেলার সময় না বাড়ালে এবার অনেকেই লোকসানের মুখে পড়বে। এদিকে মেলার ইজারাদাররা এ ব্যাপারে ইপিবির সঙ্গে আলোচনা করবে বলে ব্যবসায়ীদের ইতোমধ্যে আশ্বস্ত করেছে। তবে ইপিবির মহাপরিচালক সময় সংবাদকে জানিয়েছেন, এ বছর মেলার সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ২০ ফেব্রুয়ারি মেলা শেষ হলে ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একই প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যালস মেলা আয়োজন করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রস্তুতির জন্য হাতে সময় নেই বললেই চলে।
এতসবের বাইরে দেশের অর্থনীতি এবং মুদ্রাস্ফীতিকে মেলায় বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন বিক্রেতারা। এদের একজন চাদর বিক্রেতা আসলাম বলেন, আগে বাণিজ্য মেলার জন্য মানুষ আলাদা বাজেট করে রাখতো। এটি ছিল রাজধানীবাসীর জন্য উৎসবের মতো। এখন কেন জানি মানুষ টাকাই খরচ করতে চাচ্ছেন না। অনেক সময় একদম সীমিত লাভে পণ্য দিতে চাইলেও কিনছেন না তারা।
অবশ্য মেলা প্রসঙ্গে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। বাণিজ্য মেলায় কেনাকাটা করতে আসা এক ক্রেরা আফরোজা সময় সংবাদকে বলেন, আগেকার সময়ে বাণিজ্য মেলায় এমন অনেক পণ্য পাওয়া যেত, যা সাধারণ বাজারে সচরাচর পাওয়া যায় না। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ বাজারে বৈচিত্র্য আসলেও বাণিজ্য মেলার পণ্য সেই সেকেলে রয়ে গেছে। এতে করে ক্রেতারা আসছেন ঠিকই, কিন্তু পণ্য কেনায় আগ্রহ পাচ্ছেন না তারা।
আরেক ক্রেতা সাবেকুন বলেন, বঙ্গবাজার বা গাউসিয়াতে যা পাওয়া যায়, একই জিনিস যদি বাণিজ্য মেলায় বিক্রি হয়, তাহলে মেলার মাহাত্ম্য আর কোথায়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বলা হলেও মেলায় আন্তর্জাতিক পণ্যের বাহার খুবই সীমিত। সেই পুরনো পণ্যের ছড়াছড়ি দেখে ক্রেতারা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
মূলত মেলায় বৈচিত্র্য আনা না গেলে বিক্রি বাড়বে না বলে জানান এ ক্রেতা। গত ২১ জানুয়ারি শুরু হওয়া ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা চলবে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলছে। ছুটির দিন মেলা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবারের বাণিজ্য মেলার প্রবেশ টিকিট মূল্য গতবারের চেয়ে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর শিশুদের টিকিটের মূল্য ২০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ টাকা।
কিউএনবি/আয়শা/১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪,/বিকাল ৪:৪৮