শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

আইনে নিষিদ্ধ, বাজারে দাপট

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : বাজারে বহুল প্রচলিত চাল ‘মিনিকেট’। আদতে এই নামে কোনো ধান নেই। এই মিনিকেট নামের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে চাল বা ধানটির প্রকৃত নাম। চালের প্যাকেট বা বস্তায় মূল নামটি লিখতে দীর্ঘদিন যাবৎ বলে আসছে খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। তবে মিলমালিক কিংবা ব্যবসায়ীরা সেটির তোয়াক্কা করেননি।

অবশেষে খাদ্যশস্যকে এমন ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বাজারজাত বন্ধ করতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরে একটি আইন প্রণয়ন করে সরকার। এই আইনে চালের বস্তার গায়ে মিনিকেটের মতো ভিন্ন নাম লিখলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দণ্ডের বিধান রাখা হয়। আইনটি প্রণয়নের দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু এখনো বাজারে মিনিকেটের দাপট। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন হলেও সেটি কার্যকরে বিধিমালার প্রয়োজন, সেটি এখনো হয়নি।

কিছুটা সরু ও ঝকঝকে চেহারার মিনিকেট চাল ঠিক কোন জাতের ধান থেকে তৈরি, তা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিনিকেট নামে কোনো ধানের জাত নেই। অন্য ধান প্রক্রিয়াজাত করে মিনিকেট নামে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। দেশের বাজারের অধিকাংশ চাল উৎপাদিত হয় নওগাঁ, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়ায়। এই জেলাগুলোতে অসংখ্য চালকল রয়েছে। সেখান থেকে চাল উৎপাদিত হয়ে প্যাকেটজাত করার সময়েই প্যাকেটের গায়ে মিনিকেট লেখা হচ্ছে। সেসব চাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যাচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ‘মিনিকেট’ চাল। ক্রেতাদের পছন্দের তালিকাতেও শীর্ষে রয়েছে এই চাল। এর ফলে ধানের প্রকৃত নাম সবার অগোচরেই থেকে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) উদ্ভাবিত বিভিন্ন সরু আকৃতির ধান থেকে উৎপাদিত চাল পলিশ করে বাজারে মিনিকেট নামে বিক্রি করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মিলমালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষকেরা মিনিকেট নামে ধান উৎপাদন ও বিক্রি করছে। যার আবাদ কুষ্টিয়া, যশোর, নওগাঁ ও বগুড়া অঞ্চলে রয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে মিনিকেট নামে ধান কিনে তারা সেটি সেই একই নামে বাজারজাত করছেন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসমাইল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিনিকেট নামে আসলে কোনো ধানের জাত নেই। ভারতের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাঁচ-দশ কেজির চালের প্যাকেট বিতরণ করা হতো- যেগুলোকে বলা হতো ‘মিনিকেট’। পরবর্তীতে সেখান থেকে বাংলাদেশে মিনিকেট নামের চালের বাজারজাত শুরু হয়। মূলত, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধান পলিশ ও গ্রেডিং করে বাজারে মিনিকেট বা নাজির নামে চালানো হচ্ছে। এটি আসলে মিনিকেট নয়, অন্য ধানের জাত।

চলতি বছরের ১১ জুলাই খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনসহ এ সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। এ আইনের ৩ নম্বর ধারায় কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য হতে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণনকে অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্যদ্রব্যের মধ্য হতে স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণনকেও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

উদ্দেশ্য পূরণের জন্য খাদ্য পরিদর্শক যেকোনো সময় গুদাম, মিল, কারখানা বা অন্য কোনো স্থানে প্রবেশ ও পরিদর্শন করতে পারবেন বলেও আইনে বলা হয়েছে। তবে আইনটি প্রণয়নের কয়ে কমাস অতিবাহিত হলেও এটি কার্যকর হয়নি। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজারে যেমন ‘মিনিকেট’ চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে, তেমনি দেশের মফস্বল পর্যায়েও এই চাল মিনিকেট নামেই বিক্রি হচ্ছে। মিলমালিকরাও বস্তার গায়ে মিনিকেট লিখেই সরবরাহ করছেন।

মিলমালিক ও বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের চাহিদার কারণে বাজারে মিনিকেট চালের সরবরাহ বেশি। কুষ্টিয়ার খাজানগরের সৌদি রাইস মিলের মালিক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাজারে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পাইকার বা আড়তদারেরা মিলমালিকদের কাছ থেকে মিনিকেট, আটাশ, কাজলতা নামের ব্রান্ডের চাল সরবরাহ করতে বলে। আমরাও ওই চাহিদা মতো এসব চাল প্যাকেটজাত করে সরবরাহ করি।’

মিল থেকে মিনিকেট লেখা চাল বাজারে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেজর অটো অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই ব্যর্থতা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের; তারা কৃষকের কাছে ধানের প্রকৃত নামটি পরিচিত করতে পারেনি। কৃষকেরা আমাদের কাছে মিনিকেট নামে চাল নিয়ে আসে, আমরাও সেটি ওই নামে বাজারজাত করি।

আইন করেও মিনিকেট নামে চাল বাজারজাত বন্ধ না করতে পারার বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইন প্রতিপালনের জন্য বিধিমালা প্রয়োজন। এই আইনের বিধিমালা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিধিমালা হয়ে গেলে আইনও কার্যকর হয়ে যাবে।’

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৫:১২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2023
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit