শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন

মাহমুদা বেগম এর জীবনের খন্ডচিত্র

মাহমুদা বেগম।
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৫৭৫ Time View

মাহমুদা বেগম এর জীবনের খন্ডচিত্র
——————————————–
অথৈ মাহমুদের বয়স তখন মাত্র তিন/চার মাস। রাজশাহীর তালাইমারীর এক বাসায় চারতলায় থাকি। এক ইউনিটের চমৎকার বাসা। বাসার সামনে মাঠ। নীচতলার ভাড়াটিয়াদের সাথে সময় দিতেই হচ্ছে। কারন নীচতলায় থাকা প্লে, নার্সারি, ও টু তে পড়া তিন ভাইবোন অথৈ এর বন্ধু। বিকেলে সকালে যখনই সুযোগ পাচ্ছে অথৈ কে একটু কোলে নিতেই হবে। ওদের মা বাবাও বিষয়টা রুটিন করে দিয়েছে। স্কুল বন্ধের দিন সকালে পড়া শেষ করে আর স্কুল খোলা থাকলে বিকেলে। কেবল উপুড় হতে শেখা অথৈ ঐ বাচ্চাদের একটা তখন খেলনা। তবে চারপাশে বালিশ দিয়ে অথৈ কে বসালে অথৈ ভীষণ আনন্দ পায়। বিচিত্র শব্দ করে সেই আনন্দ প্রকাশ করতে চায়। আর ঐ বাচ্চারাও ঐ অদ্ভুত শব্দ গুলো প্রানমন ভরে উপভোগ করতে থাকে।

এক বিকেলে বাচ্চারা অথৈ কে নিয়ে একটা অন্যরকম খেলা খেলতে চাইলো। বাচ্চাদের চাচা বিদেশ থেকে এসেছে অনেক রকম খেলনা নিয়ে। সেগুলো সব অথৈ কে দেখানো চাই চাই। নিরুপায় হয়ে, ধৈর্য্য ধরে নীচতলায় অথৈ কে কোলে নিয়ে দেখছি। ওদের আবদার, ‘বালিশ দিয়ে অথৈ কে বসাও’। বসালাম, অথৈ মুগ্ধ হয়ে দেখছে। তারপর ওরা ঘরের পর্দা টেনে ঘর অন্ধকার করে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বড় খেলনাটা দেখাবে। চাবি দেওয়া, ব্যাটারি চালিত রবোকপ। যান্ত্রিক শব্দ করে হেঁটে হেঁটে অথৈ এর দিকে আসতে দেওয়া হলো। ভাবছি এখনই অথৈ এর চিৎকার শুনতে হবে। কিন্তু না, সে চোখ বড় বড় করে দেখতে থাকলো। রবোকপ যখন খুব কাছে চোখের পলকে ঠাস ঠাস শব্দ। বাচ্চাদের কান্নাকাটি। কি হলো? দেখি অথৈ রবোকপ ভেঙ্গে ফেলেছে। হাতে একটা লম্বা খেলনার দন্ড ছিল সেটা দিয়ে।

এরা তো ছিলো ছোট, তাই এদের কাছে রবোকপ থেকেও আকর্ষণীয় খেলনার নাম ছিলো অথৈ। বাড়িওয়ালার দুই ছেলে। বড় ছেলেকে কখনও দেখা যেতো না। তবে ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া, নাম আশিক। স্কুল ছুটির পর দুপুর বেলা বাসায় ফিরে, হাত মুখ ধুয়ে, কিছু খেয়ে ছুটে আসতো অথৈ এর কাছে। সে খেলতে আসতো না। আসতো আমাকে সাহায্য করতে। আমি এই ছোট্ট অথৈকে নিয়ে কতটা হিমশিম খাচ্ছি এটা নিয়ে বেশ বিচলিত। এই টুকু চার ক্লাসে পড়া বাচ্চা, এতো গম্ভীর! এতো মায়া ও দরদ নিয়ে অথৈ কে পর্যবেক্ষন করতো যে অবাক হয়ে যেতাম। কখনও কখনও যদি বলতাম, তোমার মা খুঁজবে এখন যাও। বলতো, “মা জানে, আপনি আপনার কাজ শেষ করেন, আমি অথৈ এর খেয়াল রাখছি, আপনার কাজ শেষ হলে বাসায় যাবো”। আমি অথৈ দুজনই আশিক ছাড়া হিমশিম খেতাম। অথৈ কে গোসলে সাহায্য করা ওর নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়। বিকেলে এসে অথৈ কে সুন্দর জামা কাপড় পরিয়ে বাচ্চাদের সাথে বারান্দায় বসিয়ে কঠোর নজরদারি করতো। অথৈ এর বাবা অবাক হয়ে যেতো আশিকের এই বুড়োদের মতো দায়িত্বশীলতা দেখে।

লেখাটা আশিককে স্মরন করে। আজ হঠাৎ ছোট্ট আশিককে স্বপ্নে দেখলাম। কেন দেখলাম বুঝতে পারছি না। জানিনা সে এখন কোথায় আছে? তবে যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক এই কামনা করি।

 

লেখিকাঃ মাহমুদা বেগম।

 

 

কিউএনবি/ নাহিদা /০৮.০৯.২০২৩/ সন্ধ্যা ৬.২৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit