আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের ইতিহাসে আরেক ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা দেখলো দেশটি। তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮ জন এবং আহতের সংখ্যা ৯০০ জন।
ধ্বংসস্তূপে অনেকেই আটকা পড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওড়িশার বালেশ্বরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে কীভাবে ঘটলো এতো বড় আর ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা?
ভারতীয় রেলওয়ের নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ শর্মা এএফপিকে জানান, মূলত দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস এবং কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এ দুর্ঘটনায় সরাসরিভাবে জড়িত ছিল এবং তৃতীয় একটি মালবাহী ট্রেন যা ঘটনাস্থলে দাঁড় করানো ছিল, দুর্ঘটনায় শিকার হয়।
তবে দুর্ঘটনা কী করে ঘটেছে, তার একাধিক বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় এক সূত্রের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার বলছে, প্রথমে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসই তীব্র গতিতে গিয়ে ধাক্কা মারে একই লাইনে সামনে চলতে-থাকা একটি মালবাহী ট্রেনের পিছনে।
ধাক্কা এতটাই তীব্র ছিলো যে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালবাহী ট্রেনের উপরে উঠে যায়। ফলে ২৩টি বগির মধ্যে ১৫টি বগি ছিটকে পড়ে আশে-পাশে। ঠিক তখনই পাশের লাইন দিয়ে আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগিগুলি গিয়ে পড়ে ডাউন লাইনের উপর। বেঙ্গালুরু-হাওড়া ডাউন ট্রেনটি সেই লাইনচ্যুত বগিগুলির উপর এসে পড়লে হাওড়াগামী ট্রেনটিরও দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়।
তবে রেলের একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, মালবাহী ট্রেনের সাথে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কোনও সংঘর্ষ হয়নি। কোনও কারণে প্রথমে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। সেটি গিয়ে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে। সেই লাইন ধরে তখন আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেটি এসে ধাক্কা মারে করমণ্ডলের লাইনচ্যুত কামরাগুলিকে। সেই ধাক্কার অভিঘাতে করমণ্ডলের ইঞ্জিন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে-থাকা মালগাড়ির উপরে উঠে যায়।
রেল সূত্রটি জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় মালবাহী ট্রেনটি এবং করমণ্ডল এক্সপ্রেস একই লাইনে ১৩ মিনিটের ব্যবধানে খড়গপুর থেকে ছাড়ে। বালেশ্বর স্টেশন ছাড়িয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার যাওয়ার পরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রাথমিক অনুমান, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালক যে ওই ১৩ মিনিটের গতির ব্যবধান কমিয়ে ফেলেছেন, তা তিনি বুঝতে পারেননি। কারণ হিসাবে সিগন্যালের ত্রুটি বা চালকের বেখেয়ালি ধারণা করা হচ্ছে।
তবে দুর্ঘটনার কোনও কারণই নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলে এর সঠিক কারণ জানা যাবে। আপাতত অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে হতাহতদের উদ্ধারে এবং ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উপর।
দুর্ঘটনার ফলে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সমস্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিলো শুক্রবার। শনিবারও বন্ধ রয়েছে কিছু ট্রেন চলাচল। এছাড়া খড়গপুর থেকেও ওড়িশাগামী কিছু ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/০৩ জুন ২০২৩/দুপুর ২:০৬