বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, তিনবার দরপত্র বিক্রি ও জমা নেওয়া হবে। এরপর সর্বোচ্চ দরদাতা পাবেন কোরবানীর পশুর হাটের ইজারা। তবে এতে যেন থোরাই কেয়ার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার। প্রথমবার দরপত্র কেনা ব্যক্তিকেই হাটের ইজারা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।অভিযোগ উঠেছে, দ্বিতীয় দফায় বুধবার দরপত্র কিনতে এসে অনেকে ফিরে গেছেন। তাদেরকে জানানো হয়েছে, দরপত্র জমা দেওয়া একমাত্র ব্যক্তি গত বছরের তুলনায় কিছু বেশি দর দেওয়ায় তাকেই ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দরপত্র কিনতে না পারাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। অনেকে পৌরসভাতেই হট্টগোল করেন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্র্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার কোরবানীর পশুর হাট ইজারার জন্য প্রথম দফায় দরপত্র কিনেন মাত্র একজন! গত ২৫ মে দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে মো. আলমগীর মিয়া নামে এক ব্যক্তি ভ্যাট ও আয়করসহ ৭০ লাখ টাকায় পশুর হাট ইজারা নেওয়ার কাগজপত্র জমা দেন। অভিযোগ উঠেছে, দরপত্রে উল্লেখ করা নিয়ম অনুসারে প্রয়োজনে তৃতীয়বারে মতো প্রচেষ্টা চালিয়েহ হাট ইজারা দেওয়ার কথা। পৌরসভার রাজস্ব আয় বাড়ার স্বার্থে ২০২১ ও ২০২২ সালেও তৃতীয়বার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পশুর হাটটি ইজারা দেওয়া হয়। তবে এ বছর প্রথম প্রক্রিয়ার পরই দরপত্র জমা দেওয়ার ব্যক্তি, যিনি এক ওয়ার্ড কাউন্সিলের আত্মীয় তাকে ইজারা পাইয়ে দিতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।এদিকে ইজারা পুনরায় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে মেয়রের কাছে লিখিত দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। সোমবার এক লিখিত আবেদনে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দির বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, ইজারার দরপত্রের প্রক্রিয়া তিনটি পর্যায়ে হওয়ার কথা রয়েছে। নিয়ম অনুসারে বিক্রির কথা থাকায় বুধবার মোস্তাফিজুর রহমান দরপত্র কিনতে এলে তাকে দেওয়া হয়নি। পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার আওতাধীন ভাদুঘর বাস টার্মিনালের মাঠে (বর্তমানে বিজয় মেলার মাঠ) চারদিন ব্যাপী অস্থায়ী কোরবানীর পশুর হাটের ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তির অংশগ্রহনকারী সর্বোচ্চ দরদাতা হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে অতিরিক্ত পে-অর্ডার সংযোগ করে নতুন শিডিউল ক্রয় করে দরপত্র জমা করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়। সংশিষ্ট সূত মতে, ২০২১ ও ২০২২ সালের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষে পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়। ২০২১ সালে ভ্যাট ও আয়করসহ ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় আবদুল মতিন ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি এবং ২০২২ সালে মো. আল মামুন সরকার ভ্যাট ও আয়করসহ ৬৬ লাখ টাকায় পশুর হাট ইজারা পেয়েছিলেন।বুধবার মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়াও জাকির হোসেন, আব্দুল মতিন, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল হাই, জালাল মিয়া নামে ছয়জন দরপত্র আনতে সকালে পৌরসভায় যান। কিন্তু বেলা ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দরপত্র দেননি। এমনকি জানিয়ে দেন যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আব্দুল হাই হৈহুল্লুড় শুরু করেন। এ সময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য আব্দুল হাই এ জন্য দুখ:প্রকাশও করেন।
আব্দুল মতিন বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ বসার পরেও দরপত্র ক্রয় করতে দেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। দরপত্র জমা দেওয়ার প্রথম তারিখেই ইজারার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলেছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি নাকি আইনে রয়েছে। তবে যতটুকু জানি যাকে দেওয়া হয়েছে তিনি ৭০ লক্ষ টাকার দরপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু আমি সেই টাকার ১৫% বাড়িয়ে ৮২-৮৩ লক্ষ টাকায় দরপত্র নিতে ইচ্ছুক রয়েছি।’ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, ’ঠিকাদাররা কেন সিডিউল ক্রয় করতে পারেন নি সেটা আমি জানি না। তবে দরপত্র জমা নেওয়ার প্রথম দিনে যিনি ক্রয় করেছেন, গত বছরের বাজার মূল্যের তুলনায় নিয়ম অনুসারে বেশি হওয়ায় সেটিই গ্রহন করে তাকে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/০১ জুন ২০২৩/সকাল ৯:৫১